আজ-  ,


সময় শিরোনাম:

শ্রীমঙ্গলের র্যানার স্কুল এন্ড কলেজে বহিরাগতদের প্রতিবাদের নামে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ

সালেহ আহমদ (স’লিপক):

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার খেজুরীছড়া চা বাগানের র্যানার স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে আই লাভ ইউ বলার অপরাধে বহিরাগত কিছু লোক প্রতিবাদের নামে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার একমাস পেড়িয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রহস্যজনক কারণে পালন করছে নিরব ভূমিকা। সত্যতা যাছাইয়ের জন্যও আজ পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। এ ব্যাপারে মানুষের মাঝে বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে আই লাউ ইউ বলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের নামে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে রাখা, স্কুল ছাত্রীদের ক্লাস থেকে জোরপূর্বক টেনে হিচড়ে বের করা ও বিদ্যালয়ের বিলবোর্ড ভাংচুর সহ রয়েছে নানা অভিযোগ।

কেউ বলছেন এটা পরিকল্পিত সাজানো ঘটনা। কেউ বলছেন স্কুলটি ধ্বংসের জন্য এক শ্রেণীর লোক কাজ করছে! কেউ বলছেন প্রতিহিংস্রার কারণে এই ঘটনার সূত্রপাত্র। জনমনে প্রশ্ন জেগেছে আসল ঘটনা কি? এমন রহস্যের উদঘাটন চায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিবাহক সহ সাধারণ মানুষ।

এই ঘটনার সাথে জড়িতও থাকা অতিউৎসাহী একজন ওয়ার্ড সদস্যের নাম উঠেছে এসেছে। তিনি প্রথমে মৌখিক অভিযোগ করেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের কাছে। তারপর কোন রকম তদন্তের সুযোগ না দিয়েই উস্কানি দেন বহিরাগত লোকদের।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের খন্ডকালিন এক শিক্ষক গত ২৭ আগষ্ট ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রী ও তার বান্ধবী সহ তার রুমে ডেকে নিয়ে যান। পরে ওই ছাত্রীকে রেখে বান্ধবীকে পানি আনতে পাঠিয়ে ছাত্রীকে শিক্ষকের রুমে নিয়ে আই লাভ ইউ বলার জন্য বলেন। ছাত্রীটি আই লাভ ইউ না বলায় তাকে অশ্লীল কাথাবার্তা বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই ছাত্রী বিষয়টি তার ক্লাস ক্যাপটেন ও বান্ধবীকে জানিয়েছে বলে অভিযোগ সুত্রে জানা যায়।

পরবর্তীতে ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রী তার পরিবারকে বিষয়টি অবগত করে। বিষয়টি নিয়ে তার পরিবার ও বহিরাগত কিছু লোক নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট বিচারপ্রার্থী হন। এসময় তারা অভিযুক্ত শিক্ষককে শাস্তিস্বরুপ জুতার মালা পড়ার জন্য দাবী জানান।

প্রধান শিক্ষক এমন মানবাধিকার বহির্ভূত কাজে সমর্থন করেননি। তিনি ম্যানেজিং কমিটিকে নিয়ে তদন্ত কমিটি করে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার করবেন বলে আশ্বাস দেন। ৪ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক জরুরী একটি মিটিংয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলে তার অনুপস্থিতিতে আন্দোলনের নামে বহিরাগতরা হঠাৎ করে বিদ্যালয়ে আক্রমন করে বিদ্যালয়ের বিলর্বোড ভাংচুর, শিক্ষকদের রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম থেকে বের হতে না চাইলে মারধোর করে জোড়পূর্বক টেনে হেঁচড়ে বের করার চেষ্টা করে। এসময় অনেক ছাত্রীদের হাত ধরে টানা হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জানিয়েছেন।

খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষক শয়ন তাঁতীকে (৩৫) গ্রেপ্তার গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। শয়ন তাঁতী রাজঘাট চা বাগানের গোপাল তাঁতীর ছেলে বলে থানা সূত্রে জানা যায়।

খেজুরীছড়া চা বাগানের র্যানার স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে ২০১৭ সালে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীর পিতা অভিমান্য বোনার্জী সহ ২০-২৫ জন লোক ওই ছাত্রীকে স্কুলের খন্ডকালিন শিক্ষক আই লাভ ইউ বলার জন্য রাজঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত আবেদনের অনুলিপি আমাকে দেন। আমি বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সিন্ধান্ত নেবো বলে তাদেরকে জানাই।

তখন অভিযুক্ত মেয়ের বাবার সাথে আগত লোকেরা অভিযুক্ত শিক্ষককে জুতার মালা পড়ানোর দাবী করেন। এই মানবাধিকার লংঙ্গনের কাজটি করা যাবে না বলে আমি তাদেরকে জানাই। অভিযুক্ত শিক্ষক এই স্কুল থেকে লেখাপড়া করেছিল। খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের পরিক্ষায় সে উত্তীর্ণ হয়। তার কয়েক বছরের চাকুরী জীবনে এমন খারাপ কাজে লিপ্ত রয়েছে সংবাদ শুনিনি কখনো। অতীতে তার কোন খারাপ কাজ আমার চোখে পড়েনি।

এব্যাপারে রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান র্যানার স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষানুরাগী সদস্য বিজয় ব্যানার্জি জানান, আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি কিছু বহিরাগত লোক উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। তারা আমার কথা শুনতে অনেকটা রাজি নয়। তারা মাস্টারকে জুতার মালা পড়িয়ে শাস্তি দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।

এরপরও তাৎক্ষনিক ভাবে তাদের চাপে সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রাণতোষ সরকার, রাজঘাট ইউপি সদস্য সেলিম আহমদ, সাবেক ইউপি সদস্য সুমন তাতী, গর্ভনিং বডির সদস্য আহসানুল হক দুলাল, খেজুরি ছড়া ইউপি সদস্য রষিষ্ট গোয়ালা সহ ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরের দিন ম্যনেজিং কমিটির মাধ্যমে সিন্ধান্ত হবে বলে উপস্থিত সকলকে জানানো হয়।

ওইদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের অফিসে মিটিংয়ে চলে গেলে ছাত্রীর পরিবারের লোকজন সহ বহিরাগত কিছু লোক স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করে শিক্ষকদেরকে রুমে তালাবদ্ধ করে উশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে জানতে পারি। তখন আমি আর যাইনি। আমি গেলে তখন অপমানিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল এই উশৃঙ্খল লোকদের কাছে।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষকের এতো বছরের চাকুরী জীবনে তিনি খারাপ কোন কাজের সাথে জড়িত আছেন বলে আমি পাইনি। তার খারাপ কোন আচরন কখনো চোখে পড়েনি। অনৈতিক কোন কাজে জড়িত থাকলে বা অভিযোগ পেলে অনেক আগেই তাকে স্কুল থেকে অব্যাহতি দিতাম। বরং তিনি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি খুবই আন্তরিক ছিলেন।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন বলেন, আমরা এব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির জবাব দাখিলের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ঘটনার দিন বহিরাগতরা শিক্ষার্থী মেয়েদের টেনে হেঁচড়ে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মেয়েগুলো অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

ঘটনার একমাস অতিক্রম হয়ে গেলেও গঠন করা হয়নি কোন তদন্ত কমিটি। নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। উদঘাটন হয়নি মূল বিষয়। ব্যাপারটি রহস্যজনক বলে সচেতন মহল মনে করছেন।